সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০২২

বরিশালে ‘নিখোঁজ’ ছাত্রদল নেতাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার

খোকন হাওলাদার ॥ 


বরিশাল নগরী থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পর ছাত্রদল নেতা ফোরকান হোসেন ইরানকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার (০৯ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে জেলার উজিরপুরের গুঠিয়া ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের একটি মসজিদের অদূরে জঙ্গল থেকে তাকে উদ্ধার করে গ্রামের লোকজন। তবে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি সাজানো ছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ।

উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান ছাত্রদল নেতাকে উদ্ধারের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তারা ৯৯৯-এর মাধ্যমে নারায়ণপুর গ্রামের জঙ্গলে ইরানকে উদ্ধারের খবর পান।

রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তার স্বজনদের খবর দেওয়া হয়। পরে রাত ১২টার দিকে ইরানকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে গত শনিবার রাত ৮টার দিকে নগরের গোঁড়াচাদ দাস সড়ক থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে ইরানকে কে বা কারা তুলে নেয় বলে তার স্বজনরা অভিযোগ করেন।

এই ঘটনায় গতকাল ঢাকায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন ইরানকে তুলে নিয়ে গেছে। তাকে ফেরত দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

ইরান বরিশাল জেলা ছাত্রদলের ১ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক। তিনি উজিরপুর উপজেলার ধামুরা এলাকার চাঁন সরদারের ছেলে। নগরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ভিলেজের বিবিএ’র শিক্ষার্থী ইরান গোঁড়াচাঁদ দাস সড়কে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মন্টু সাংবাদিকদের জানান, গতকাল রাত ৮টার দিকে পথচারীরা জঙ্গলের মধ্যে বাঁচাও-বাঁচাও চিৎকার শুনতে পান। তারা টর্চের আলো ফেলে শিকল দিয়ে হাত-পা বাঁধা, গলায় গেঞ্জি পেঁচানো এবং শুধু আন্ডার গার্মেন্টস পরা অবস্থায় এক যুবককে উদ্ধার করেন।

তবে তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহৃ দেখা যায়নি। পরে গ্রামের লোকজন বিষয়টি ৯৯৯-এ জানান। উদ্ধর হওয়া ইরানের বরাতে মন্টু বলেন, অজ্ঞান অবস্থায় তাকে ফেলে রাখা হয়েছে।

গলায় পেঁচানো গেঞ্জি দিয়ে তার মুখ বাঁধা ছিলো। জ্ঞান ফিরলে নড়াচড়া করে গেঞ্জি মুখ থেকে সরে গেলে তিনি চিৎকার করেন। মন্টু আরও জানান, সন্ধ্যার পর দুটি সাদা রংয়ের মাইক্রোবাস গ্রামে ঢুকতে দেখেছেন।

তাদের ধারণা ওই মাইক্রোবাসে করে তাকে এনে ফেলে রাখা হয়। এদিকে ইরানকে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার অভিযোগ জানিয়ে শনিবার রাত ১০টার দিকে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছিলেন তার চাচাত ভাই রাব্বী।

ইরান ও রাব্বী গোঁড়াচাঁদ দাস সড়কে একই বাসায় থাকেন। ঘটনার সময় ইরানের সঙ্গেই ছিলেন বলে দাবি করেছেন রাব্বী। অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত হাসান জানান, শনিবার রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযোগের সত্যতা পাননি।

বরং বিকেল ৪টার দিকের ফুটেজে দেখা গেছে, ইরান ও রাব্বী একটি ইজিবাইক থেকে নেমে দুজন দুই দিকে চলে গেছেন। তিনি আরও জানান, রাব্বী কথিত অপহরণের ঘটনাটি ইরানের পরিবারকে না জানিয়ে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসানকে জানান এবং তার পরমর্শে থানায় অভিযোগ দেন।

ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক কামরুল জানান, রাব্বী মোবাইল ফোনে তাকে জানানোর পর তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানাতে বলেন। কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সগীর হোসেন জানান, ছাত্রদল নেতা ইরানের চাচাত ভাই রাব্বীকে পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর সাজানো ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। তারপর তারা উদ্ধার নাটক সাজিয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায়ও ইরানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এসব বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: